April 28, 2024, 12:54 pm

বেদে পল্লীতে আধুনিকার ছোঁয়া

0 0
Read Time:6 Minute, 12 Second

ইকবাল হোসাইন

বেদে (বাদিয়া বা বাইদ্যা) বাংলাদেশ ও ভারতের একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। যারা সাধারনত নৌকায় বসবাস করে। তারা নৌকায় করে একেক সময় একেক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করে। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া এখন তারা আর নৌকায় থাকেনা ।খোলা আকাশের নিচে, গাছতলায়, অস্থায়ী ঝুপরিতে, রেললাইনের ধারে, নদীর পাড়ে নৌকায় এদের বসবাস।

বেদে মেয়েরা বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেঘুরে নিজেদের বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করে। এরা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে বাতব্যথায় সিঙ্গা লাগানো, ‘দাঁতের পোকা’ তোলা, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা ও সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ-কবজ বিক্রি, ঝাঁড়-ফোক দিয়ে আয় করত। সাপের খেলা দেখিয়ে আর নানা কথায় ওষুধ বিক্রি করে চলত ওদের সংসার। তবে বেদেরা সবচেয়ে বেশি যেটা করে সেটা হল সাপের বিভিন্ন রকমের খেলা দেখিয়ে টাকা উপার্জন করা। এছারাও মানুষকে সাপে কমড়ালেও বেদেরা শরীর থেকে সাপের বিষ নামিয়ে দেয়।

শঙ্খিনী, পদ্মিনী, কালনাগ, গোখরা, আহলাদ, দারাজ, বাঁশপাতা, আরো কত কত জাতের সাপ আর বেজি নিত্যসঙ্গী তাদের। বাক্স ভরা এসব সরীসৃপ আর বেদে বা বাইদ্দারা জীবন ধারণের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। নারীরা ছোট বাক্সে সাপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরে বাত ছাড়াতে চোঙা দিয়ে মানুষের শরীর থেকে রক্ত আনা, ইমিটেশনের গহনা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের খাবারের জোগান দেয়।একজন বেদে বল্লো জন্মসূত্রেই সাপখেলা দেখানোর পেশায় আছি। তবে ২০০০ সালের পর থেকে অন্যান্য পেশার প্রতিও আমাদের সম্প্রদায়ের লোকরা ঝুঁকতে শুরু করেছে। ইদানিং মেয়েরা বাংলা সিনেমাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং সুনামও অর্জন করছে। বেদ উপাধি মূলত কোন শাস্ত্রে নেই। সাপ ধরি বলে মানুষজন বিভিন্ন নামে আমাদের ডাকে।আমাদের ছেলেমেয়েরা এখনো লেখা পড়ায় অনেক দূর এগিয়ে গেলেও তাদেরকে মানুষ ঘৃণার চোখেই দেখে।আর সেই নামেই ডাকে ।যেমন বিক্রমপুরে বলা হয় ‘মাল’, কুমিল্লায় ‘বাইদ্যা’, সিলেটে ‘বেজ’, আবার বইতে লেখে ‘বেদে’।’

মানবেতর জীবন-যাপন করা এই মানুষগুলোর একটাই পরিচয়, তারা ‘বেদে’। কখনো তাবিজ-কবজ বিক্রি করে, কখনো বা সাপের খেলা দেখায়। খুব অবাক হলেও সত্যি, বেদেদের একমাত্র উপার্জনের পথ বলতে তাবিজ-কড়ি বিক্রি ও সাপের খেলা দেখানোই। খুবই সামান্য ওদের জীবন জীবিকা। ১৯৩৯ সালে দেবকী বসু বেদে জনগোষ্ঠীর নিয়ে জীবন যাত্রা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার নাম দেয়া হয় ‘সাপুরে’। এরপর ‘লখিন্দর’, ‘নাগিন কন্যার কাহিনী’, ‘নাগিন’, ‘সর্প রানী’, ‘সাপুড়ে মেয়ে’মহ অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ হয়। তবে সর্বশেষ ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ বাংলাদেশের লোকজ ধারার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অনজু ঘোষ অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে এতদকালের সর্বাপেক্ষা ব্যবসা সফল ছবি। এসব সিনেমায় আমরা দেখেছি তাদের বসবাস নৌকাতেই। কিন্তু তারা পেশার পাশাপাশি পাল্টাচ্ছেন নিজেদের বাসস্থানের স্থান।

একদিনের ভ্রমণে বেদে পাড়ায় গিয়ে জানা গেল খানিকটা ব্যতিক্রম গল্প। বছর চারেক আগেও তাদের কোনো ঠিকানা ছিলো না। হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জে সাপ খেলা, সাপ ধরা, ঝাঁড়-ফুক দেয়ার মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। ঢাকার সাভার ছাড়াও বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, ছাতকসহ দেশের অনেক জেলাতে নদীর ঘাটে নৌকায় অথবা পতিত জায়গায় তাবু টাঙ্গিয়ে বসবাস করতে দেখা যায় তাদের। এসময় বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস আদতে নৌকাতেই বেশি ছিলো, কিন্তু কালের বিবর্তনে ডাঙায় বসবাস করছেন সিংহভাগ। এখন বেশির ভাগ স্থালে বসবাস করলেও তাদের যেকোন অনুষ্ঠানে তারা গেয়ে থাকেন- ‘এক ঘাটেতে রান্দি বারি মোরা/ অন্য ঘাটে খাই/ মোদের সুখের সীমা নাই’।রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব নৌকাতেই হতো। কিন্তু এখন বেশির ভাগ বেদে জল ছেড়ে স্থলে ঠাঁই নিয়েছে। গৃহস্থের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে স্থায়ী বসবাস শুরু করেছে আমাদের বেদে সম্প্রাদায়ের লোকজন। 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ