April 27, 2024, 10:13 am

গৌরবোজ্জল ৭১’র রায়পুরা

0 0
Read Time:8 Minute, 56 Second

ইকবাল হোসাইন

দীর্ঘ সাধনা এবং ৯মাস সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধের ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল এ স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ বিশেষ অবদান, সাহসিকতাপূর্ণ বীরত্ব ও জীবন ত্যাগের জন্য স্বাধীনতাত্তোর সরকার জাতীয় বীর সৈনিকদের ৪টি বিভিন্ন শ্রেনীতে খেতাবে ভূষিত করেন। পুরো নরসিংদী জেলার বীর কৃতিসন্তানেরা বিভিন্ন শ্রেনীতে ৯টি রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন। এর মধ্যে রায়পুরা উপজেলাতেই ৫টি। এর মধ্যে ০১টি বীরশ্রেষ্ঠ (মরনোত্তার), ০১টি বীর উত্তম, ২টি বীর বিক্রম ও ০১টি বীর প্রতীক।

সশস্ত্র সংগ্রামে প্রশংসনীয় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরুপ সর্বোচ্চ বীরত্বপূর্ণ সম্মান দেওয়া হয়েছে তাদেরকে, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাহসিকতা দেখিয়েছেন। যেখানে নিশ্চিত মৃত্যু ঝুকি ছিল সেখানে তাদের অসীম সাহসিকতা ও চরম আত্মত্যাগের ফলে শত্র পক্ষের দ্বারা বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি সম্ভাবনাকে প্রতিহত করে শত্র পক্ষকে পরাজিত করেছেন। বীর উত্তম ও বীর বিক্রম প্রদান করা হয়েছে তাদেরকে যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে অথবা বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থার ভিতরে প্রশংসনীয় সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বীর প্রতীক ভূষিত করা হয়েছে তাদেরকে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। রায়পুরা উপজেলাতে ৫টি রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হলেন তারা হলেন, বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শহীদ মতিউর রহমান, বীর উত্তম ব্রিগ্রেডিয়ার ক্যাপ্টেন এ. এন. এম. নূরুজ্জামান, বীর বিক্রম সুবেদার খন্দকার মতিউর রহমান, বীর বিক্রম শহীদ মোঃ শাহাবুদ্দিন ও বীর প্রতীক হাবিলদার মোঃ মোবারক হোসেন।

আজ ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা হানাদার মুক্ত হয়। সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের কবল থেকে গৌরবোজ্জ্বল বিজয় ছিনিয়ে আনে। ৭ই এপ্রিল রায়পুরায় সংগঠিত হয়েছিল সর্বদলীয় প্রশিক্ষণ। ১৩ এপ্রিল বেলাবোর বড়িবাড়ী এলাকায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে ৮ ঘন্টাব্যাপী মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। ১৪ এপ্রিল রায়পুরা থানায় অস্ত্রাগার লুণ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন- রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আফজাল হোসাইন, তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রয়াত জালালউদ্দিন আহমেদ ও সেক্রেটারী হারুনূর রশীদ। খবর পেয়ে ১৮ মে পাকবাহিনী রায়পুরায় প্রবেশ করে, দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম ও স্থবির হয়ে পড়ে যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা। পরবর্তীতে স্থানীয় এমপি প্রয়াত আফতাব উদ্দিন ভূইয়া, প্রয়াত গয়েছ আলী মাস্টার, রায়পুরা’র বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক, রাজনীতিবিদ ফজলুল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে ৮টি গ্রæপকে ভারতের তেজপুর থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন- মহিষমারা রেলওয়ে সেতু, দৌলতকান্দি, নলবাটা প্রভৃতি স্থানে। তৎকালীন রায়পুরার অন্তভর্‚ক্ত বর্তমান বেলাবো উপজেলার উজিলাব গ্রামের আঃ হাইয়ের বাড়ীটি মিনি ক্যান্টনম্যান্ট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায় এবং আঃ হাই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মেজর হাই নামে পরিচিতি পান। ঢাকা থেকে আগত তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পুলিশের লোকজন এখানে সমবেত হন।
১৮ই অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ের মির্জানগর ইউনিয়নের বাঙ্গালীনগরে অবস্থিত ৫৫নং রেলসেতুতে দুই ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়। এতে ৬জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। এছাড়াও ৩৩জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন- লতিফ কমান্ডার, কমান্ডার জয়ধর আলী, কাজী হারুন, প্রয়াত ইদ্রিস হালদার প্রমূখ।
৭ই নভেম্বর পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ রণাঙ্গনে প্রচন্ড যুদ্ধ করে শহীদ হন চট্টগ্রাম রাউজানের সুবেদার বশর, রায়পুরা মরজাল গ্রামের সার্জেন্ট আঃ বারি, খাকচক গ্রামের এয়ারফোর্সের নুরুল হক, রাজনগর গ্রামের বেঙ্গল রেজিমেন্টের সোহরাব। এ ছাড়াও কাজী হারুন-অর-রশিদ, রাজনগর গ্রামের সুবেদার ইপিআর জয়দর আলী ভূইয়া ও ইদ্রিস হাওলাদারের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।

এছাড়াও, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ নিজ লেখা কবিতা, গান রচনা করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারের ব্যবস্থা করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেন। চরাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র মোজাম্মেল হক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন।

প্রতি বছরই দিবসটি উপলক্ষ্যে রায়পুরায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে।

এই দিনে রায়পুরাবাসী গভীরভাবে স্মরণ করেন- যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বশির, দুদুসহ আরো অনেককে। দীর্ঘ ৯মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারগণ ছাড়াও বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন কমরেড শামসুল হক। বিশেষ অবদানের জন্য রণাঙ্গনের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়া হয়। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর মুক্ত হয় রায়পুরা।

উপজেলা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আজকের এই দিনটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যবহন করে। প্রতিবছরের মত এবারও এই দিনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলেন, রায়পুরা মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুত্র ; আলোকিত খবর

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ