ইকবাল হোসাইন
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশায় ইরি-বোরো বীজতলার চারা বিবর্ণ, আবাদ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় কৃষক
মাঘের শীতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে গোটা কুড়িগ্রাম। জেলার উপর দিয়ে বইছে মাঝারী শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশা ও শীতের দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড শীতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজিবন। ঘন কুয়াশা ও শীতের দাপটে ইরি-বোরো আবাদ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এবারে জেলায় চলতি ইরি-বোরো বীজ তলা তৈরি করা হয়েছে ৬হাজার হেক্টর। কিন্তু ঘন কুয়াশায় অনেকের বীজতলার চারা বিবর্ণ ধারণ করেছে। ঘন কুশায়ার কারণে কোন কীটনাশকও কাজ করছে না। তাই হীমের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে স্বচ্ছ সাদা রঙের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখছেন বীজতলা। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে জমিতে চারা রোপনের সাহস পাচ্ছে না কৃষকেরা।
মঙ্গলবার (২৩জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত সোমবার এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছে শ্রমজীবি মানুষজন। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলার নদীর পাড়ের চরাঞ্চলের মানুষজন।
ঘন-কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। তীব্র ঠান্ডায় মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট,সর্দিকাশিসহ শীত জনিত রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৬০ জন রোগী। অন্যদিকে, শিশু ওয়ার্ডে ৪৪ টি বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৯০ জন রোগী। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে থাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের রিকশা চালক সুজন বলেন, কিছুদিন থাকি ঠান্ডা খুব পড়ছে। আজও খুব ঠান্ডা রাস্তায় লোকজনও কম।
এদিকে রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের চাকিরপশার তালুক ব্যাপারি পাড়া গ্রামের কৃষক হানিফ বলেন, ঘন কুয়াশায় ইরি-বোরো বীজতলার চারা হলুদ বর্ণ হয়েছে। কীটনাশক দিয়েও কোন লাভ হয় নাই।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, জানুয়ারি মাস জুড়েই তাপমাত্রা এরকম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২৫ জানুয়ারীর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আবার হ্রাস পেতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, এবারে চলতি ইরি-বোরো লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে ১২হাজার ২৪৫ হেক্টর। ৭৫২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে অনেক বীজতলার চারা বিবর্ণ হয়েছে। সে সকল কৃষকদের জীপসাম স্প্রে করতে বলা হয়েছে। তবে রোদ হলে স্বাভাবিক হতে পারে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, জেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় কৃষকদের বোরো আবাদে বিলম্বিত হচ্ছে।বীজতলা এখনো নষ্ট হওয়া শুরু করে নাই।তবে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্য গ্রহন করতে না পেরে চারা গাছেরর পাতা হলুদ হয়ে যায়। বীজতলা নষ্টের হাত থেকে বাঁচতে কৃষকদের বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুত্র : জোনাকী টেলিভিশন
Leave a Reply